মানুষকে তাদের অস্তিত্ব রক্ষা ও অগ্রগতির জন্য পরিবেশের উপর নির্ভর করতে হয়। পরিবেশের সুস্থতা অসুস্থতা দুই’ই মানুষসহ গোটা জীবজগতের অর্থবহ অস্তিত্বের জন্য  গুরুত্ব বহন করে। জীবনধারণের প্রাথমিক উপকরণ হচ্ছে পরিবেশ। আমাদের সামগ্রিক জীবনটা পরিবেশের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত। বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক আলোচিত বিষয় হল পরিবেশ। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য দূষণমুক্ত পরিবেশ একান্ত প্রয়োজন।অথচ আমাদের চারপাশের খুব সহজেই যেভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে তা সত্যিই বিপদজনক।বর্তমানে যানবাহন ও শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া পরিবেশ দূষণের একটি অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।কালো ধোঁয়া বাতাসে জেগে ছড়াটা ৭০ভাগ হচ্ছে কার্বন-মনোক্সাইড। এটি সরাসরি রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে ক্রিয়া করে রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এবং এর ফলে মৃত্যু ঘটতে পারে। কালো ধোয়ার মিশ্রিত শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি অব্যাহত করে এবং ক্ষুধামন্দা অসময়ে গর্ভপাত এমনকি শিশুর মৃত্যুও ঘটতে পারে।এছাড়া কালো ধোঁয়ায় ফুসফুস ক্যান্সার সৃষ্টি করে এবং পারদ শরীরে ঢুকে এবং থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যগত করে।

পরিবেশ বিভাগের একটি জরিপে জানা যায় বর্তমানে দেশে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প কারখানা অসংখ্য দুই হাজারেরও বেশি এবং তা ক্রমান্বয়ে  বেড়ে চলেছে। শিল্প কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া বের হয় তা যানবাহনের কালো ধোঁয়ার মতোই ক্ষতিকর ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে যানবাহন হতে নির্গত কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস এবং আগাছার মত দেশের প্রতিটি গ্রাম গঞ্জে শহরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া প্রতিরোধে অবশ্যই আমাদের সচেতন হতে হবে।যানবাহন হর্ন বাজিয়ে আমাদের সামনে দিয়ে রোগের সিগনাল দিয়ে যাচ্ছে অবিরত।অপরদিকে শিল্প-কারখানার প্রচন্ড দাপট। আবাসিক এলাকাসহ অপরিকল্পিতভাবে কলকারখানা ওঠার ফলে যানবাহনের কালো ধোঁয়ার মতো জনগণের ক্ষতি করছে। এবং বিভিন্ন রোগে ভুগছে। চিকিৎসকদের মতে কালো মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে লাগামহীন।কর্মকাণ্ডে পৃথিবীর স্বাভাবিক অনেকাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।বায়ু দূষণ,পানি দূষণ, মাটি দূষণ এবং শব্দ দূষণ সর্বোপরি পারমানবিক দূষণ প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন।পরিবেশ দূষণ সমস্যা মানুষের শ্রেষ্ঠ সমস্যা। নির্বিচারে উজার  জনসংখ্যার চাপে নগরায়ন তথা শিল্পায়ন এবং ধ্বংসাত্মক অস্ত্র ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট যে বর্জ্য ও রাসায়নিক গ্যাস প্রতিনিয়ত আমাদের ভূপৃষ্ঠের জল বায়ুমন্ডলকে দূষিত করছে।

কালো ধোঁয়া নির্গমন এর বিরুদ্ধে বাস্তবভিত্তিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এর প্রতিকার অবশ্যই সম্ভব। যানবাহনের ক্ষেত্রে পুরাতন এবং ত্রুটিপূর্ন যানবাহন  চলাচল আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ করতে হবে। এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কালো ধোঁয়া নির্গত গাড়ির আটকাদেশ বাস্তবতায় কার্যকরী করতে হবে।বিষাক্ত কালো নির্গমনের পরিমাণ হ্রাসের লক্ষ‍্যে এবং তা নিবারণের সরকারি পদক্ষেপ মাঝে মাঝে পরিলক্ষিত হলেও যথাযোগ্যভাবে পালন হচ্ছে না এবং অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় কেউ এই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিতে চান না।আর এর ফলে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও শিল্প কারখানার ব্যবস্থাপনায় নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার পরিমাণগত বেড়ে চলেছে।যেখানে সেখানে বিশেষ করে আবাসিক এলাকাসহ অপরিকল্পিতভাবে কল কারখানা স্থাপন বন্ধ করতে হবে এবং তা স্থাপনে বৈধ  অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনকেও যানবাহন ও কলকারখানা নির্গমন প্রতিরোধ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কালো ধোঁয়ার সাথে নির্গত গ্যাসের মাত্রা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে দেশে ক্যান্সার, যক্ষাসহ বেশ কিছু জটিল রোগের প্রকোপ বেড়ে যাবে।

পরিবেশ নানবিধ উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত যায় একে অপরের সম্পূরক ও সহযোগী হিসেবে কাজ করে এবং এভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকলেই  জীবনের অস্তিত্ব বিদ‍্যমান থাকে। কিন্তু সভ্যতার শুরু হতে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে বিশ্ব পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। প্রকৃতি, পরিবেশ ও মানুষের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমন্বয় না হওয়ার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত। অন‍্যন্ত পুরোনো যানবাহন  এবং ত্রুটিপূন ইঞ্জিনের যানবাহন থেকে বেশি ছড়ায়।এই কালো ধোঁয়ার সাথে যে রাসায়নিক দ্রব্য ও গ্যাস নির্গত হয় তা পরিবেশের জন্য অন্তত ক্ষতিকর। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র রাজধানী  ঢাকায়  চলাচলকারি মোটরগড়ির কারণে ঘন্টায় প্রায় ১২ লিটার এর তৈল পড়তে পারে এবং এজন্য যে পরিমাণ অক্সিজেন এর দরকার হয় তার মধ্যে অন্তত ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন আসে বাতাস থেকে। এতে সহজেই বোঝা যাচ্ছে  বায়ু দূষণের জন্য এর প্রভাব কত বেশি ও ভয়ঙ্কর। অপরদিকে অপরিকল্পিত অবৈজ্ঞানিক পন্থায় গ্রাম গঞ্জে শহরে বিভিন্ন আনাচে-কানাচে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার কারণে বায়ুকে দূষিত হয়ে পড়ছে এবং পাশাপাশি দুষিত হচেছ পরিবেশ।

আপনার অভিমত