নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ের ১২৩৯টি বাসা বহিরাগতদের দখলে রয়েছে। এসব বাসা ৩ থেকে ১০ লাখ টাকায় হাত বদল হচ্ছে। এ ছাড়া ফাঁকা জমিগুলো ক্রমে অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, আসাম-বাংলা পথকে ঘিরে সৈয়দপুরে রেলওয়ের গোড়াপত্তন হয়। এখানে রেলওয়ের জায়গা রয়েছে মোট ৭৯৮ দশমিক ৯ একর। এর মধ্যে ১১০ একর জুড়ে ১৮৭০ সালে স্থাপিত হয় দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। অবশিষ্ট জায়গায় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাংলো, সাব-বাংলো, দুই কক্ষ ও এক কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ও আধাপাকা কোয়ার্টার। এ ছাড়া বেশ কিছু জায়গা ফাঁকা পড়েছিল। এখানে রেলওয়ে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রয়েছে অফিসার্স বাংলো ৩১টি, সাব বাংলো ১৩৯টি, দুই কক্ষের বাসা ৭১১টি এবং এক কক্ষের বাসা ১৬০৭টি। শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত বাংলো, সাব বাংলো, পাকা ও আধাপাকা কোয়ার্টারের মধ্যে বরাদ্দ ৯৭৪টি, খালি পড়ে রয়েছে ১০৪৬টি এবং বসবাসের অনুপযোগী ২২৯টি। আর ১২৩৯টি ইউনিট দখলে নিয়েছে বহিরাগতরা।

একসময় রেলওয়ের এসব বাংলো ও কোয়ার্টারের চতুর্দিকে অনেক ফাঁকা জায়গা ছিল। কিন্তু এসব জায়গায় ছিল না কোনো রকম সীমানাপ্রাচীর। কোথাও কোথাও জমিগুলো শুধু রেললাইন কিংবা পাকা স্থায়ী সীমানা খুঁটি দিয়ে শনাক্ত করা ছিল। তবে রেলওয়ে বাংলো ও কোয়ার্টারসংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় জমিগুলো রেললাইনের খুঁটি ও তাঁরকাটা দিয়ে ঘেরা অবস্থায় ছিল। তার পরও রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসীনতা ও অবহেলায় এসব ফাঁকা জায়গা ক্রমে অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাচ্ছে। তবে সৈয়দপুরে কী পরিমাণ রেলভূমি বেদখল হয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য মেলেনি।

রেলওয়ের একটি সূত্র জানায়, সৈয়দপুরে রেলওয়ে ভূমির অধিকাংশেরও বেশি বেদখল হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে স্বাধীনতার পর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে অনেক কোয়ার্টার বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এতে করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব কোয়ার্টার তথা বাসাবাড়িতে থাকতে অনীহা প্রকাশ করে। এর এক পর্যায়ে এর অনেক আবার পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। রেলওয়ের এক শ্রেণির অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মচারীর সহযোগিতায় সেসব কোয়ার্টার ও ফাঁকা জায়গা আস্তে আস্তে বেদখল হতে থাকে। কিছু শ্রমিক-কর্মচারী ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বসবাসযোগ্য কোয়ার্টার বসবাসের অযোগ্য কিংবা ড্যামেজ দেখিয়ে নিজেদের দখলে রাখেন। পরবর্তী সময় তারা সেসব কোয়ার্টার ও ফাঁকা জায়গায় বাইরের লোকদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দেন। এ শহরে এমন দেখা দেখা গেছে, কোয়ার্টারে বসবাসকারী শ্রমিক-কর্মচারী তাঁর নামে বরাদ্দ কোয়ার্টারের ফাঁকা জায়গায় নতুন করে বাসাবাড়ি তৈরি করেন। পরবর্তী সময় সেসব আবার অন্যের কাছে বিপুল টাকায় হস্তান্তর করেছেন। শহরের যেসব এলাকায় বেশির ভাগ কোয়ার্টার ও ফাঁকা জায়গা অবৈধ দখলে চলে গেছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, রাইস মিল নিচুকলোনি, অফিসার্স কলোনি, মুন্সীপাড়া, ইসলামবাগ, রসুলপুর, গোলাহাট, বাঁশবাড়ী, মিস্ত্রিপাড়া, সাহেবপাড়া, গার্ডপাড়া ও আতিয়ার কলোনি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এসব কোয়ার্টার ও ফাঁকা জায়গা দখলের বিষয়ে স্থানীয় থানায় দু-একটি সাধারণ ডায়েরি ছাড়া আর কিছুই করেনি।

স্থানীয়রা জানায়, রেলওয়ের ফাঁকা জায়গা বা কোয়ার্টার দখলে নিয়ে প্রথমে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে নেওয়া হয়। এরপর সেখানে অনুমতি ছাড়াই দিব্যি গড়ে উঠছে বহুতল ভবন, বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এভাবে রেলওয়ে শহর সৈয়দপুরে প্রায় প্রতিদিন রেলওয়ে কোয়ার্টার ও ফাঁকা জায়গা সাধারণ মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে। দখলের প্রক্রিয়া থেকে বাদ যায়নি রেলওয়ে বাংলো ও বাসাবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে রক্ষার জন্য জলাধারগুলো। শহরের মুন্সিপাড়া মহিলা কলেজ রোডে এ রকম একটি জলাধার দখল করে তাতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে খালেদ মার্কেটের পেছনে একসময় রেলওয়ের বেশ কিছু কোয়ার্টার ছিল। বর্তমানে সেসব আর চোখে পড়ে না। সেখানে রেলওয়ে কোয়ার্টার ভেঙে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

এসব বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মো. তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দখলের বিরুদ্ধে থানায় শতাধিক সাধারণ ডায়েরি করা রয়েছে। আর দখলের বিষয়টি রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগকে একাধিকবার জানানো হয়েছে।’

আপনার অভিমত