বছরে ক্ষতি হচ্ছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা : বুয়েটের গবেষণা

ঢাকা মহানগরীতে অসহনীয় যানজটে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা শেষে এই তথ্য জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন। : গতকাল শনিবার সকালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ ‘গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহারে যানজট নিরসনের পরিকল্পনা অন্তভুক্তি ও বাস্তবায়নে অঙ্গীকার’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহার ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার শিরোনামে সভায় বক্তব্য রাখেন কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, বিআরটিসির পরিচালক (টেকনিক্যাল) মাহবুবুর রহমান, বারবিডার সাবেক সভাপতি ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি আবদুল হামিদ শরীফ, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য নাদের চৌধুরী, বিকল্প ধারার সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। : ‘মিটিগেটিং ট্রাফিক কনজেশন ইন ঢাকা : অ্যাপ্রোপ্রিয়েট পলিটিক্যাল এজেন্ডা’ শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদনে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ঢাকা শহরের মোট দুর্ঘটনার ৭৪ শতাংশ ঘটে পথচারী পারাপারের সময়। ঢাকা শহরে প্রতিদিন গণপরিবহনগুলো ৩৬ লাখ ট্রিপ দেয়। এসব গণপরিবহনের ৩৫ শতাংশ যাত্রী যায় কর্মক্ষেত্রে। : তিনি বলেন, ঢাকার ৮০ শতাংশ গণপরিবহনই ইঞ্জিনচালিত। যানজটের কারণে পিক আওয়ারে এ গণপরিবহনগুলোর গতিবেগ ঘন্টায় ৫ কিলোমিটারে নেমে আসে, যেখানে পায়ে হেঁটে চলার গড় গতিও ৫ কিলোমিটার। ফলে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এই যানজটে প্রতি বছর ৩৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। : ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘নগরের যানজট যদি ৬০ শতাংশ কমানো যায় তবে ২২ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো যাবে।’ এ সময় তিনি নগরের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দেন। ‘এখন ঢাকায় দেড় শ থেকে দুই শ বাস সার্ভিস রয়েছে। প্রতিটি রুটে একটি করে কোম্পানিকে এর দায়িত্ব দিলে ভালো হয়। এতে সড়কে প্রতিযোগিতা কমবে। এ ছাড়া আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো সর্ম্পূর্ণভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনারও পরামর্শ দেন তিনি। : অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, যানজটের কারণে মানব চরিত্রের নয়টি দিক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগে প্রভাব পড়ছে নাগরিকদের। এ ছাড়া গণপরিবহনে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নানাভাবে নিগৃহীত হওয়ার কথাও উঠে আসে তার এই প্রতিবেদনে। ঢাকা মহানগরের গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণে একটিমাত্র পরিবহন সংস্থা গঠনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বছরে ১ হাজার কোটি টাকা সাবসিডিয়ারি দিয়ে বছরে যদি ৫ হাজার কোটি টাকা লাভ করতে পারি, তবে সেখানে সাবসিডিয়ারি দিলে ক্ষতি কোথায়?’ পরিবহন খাতে দুর্নীতি, নৈরাজ্য বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও মেয়রদের আরও বেশি দায়িত্ববান হতে অনুরোধ জানান। : রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি আবদুল হামিদ শরীফ বলেন, একটি মোটামুটি উন্নত শহরের জন্য ২৫ শতাংশ ভালো সড়ক প্রয়োজন। আমাদের দেশে যা রয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। : বিআরটিসির পরিচালক (টেকনিক্যাল) মাহবুবুর রহমান জানান, দেশের মোট যানবাহনে মাত্র ০ দশমিক ১ শতাংশ বিআরটিসি পরিচালনা করে। এতে বাসের সংখ্যা ১ হাজার ও ট্রাকের সংখ্যা ১৫০। : নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সড়কে এত মৃত্যুর মিছিল, কিন্তু সরকার দলীয় নেতারা দেখুন কত হৃদয়হীন আচরণ করছেন। বাসের চাপায় মানুষ মারা যাচ্ছে, সরকারের নেতারা বলছে, ‘আমরা কি বাস চালাই’? ‘সড়কে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে’ সরকার এমন দাবি কেমন করে করে? সড়কে মানুষের মৃত্যুর দায় সরকারকেই নিতে হবে।’ : কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বড় দুটি দল আসেনি। হতাশার কিছু নেই। আজকে যারা বড় আছে, কালকে তারা নাও থাকতে পারে। তারা আসেনি বলে এমনটি ভাবার কারণ নেই সড়কে মৃত্যু নিয়ে তারা ভাবছে না।’ : চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন নগরে অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণের সমালোচনা করে বলেন, অপরিকল্পিত ফ্লাইওভারের কারণে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন করেন তিনি। : :

আপনার অভিমত