এবারের বন্যায় গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় তিন হাজারের বেশি অগভীর নলকূপ নষ্ট হয়েছে। সেগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু মেরামতের উদ্যোগ নেই।

গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার সাতটি উপজেলায় ২২ হাজার ৫১৪টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৩১টি অগভীর নলকূপ নষ্ট হয়েছে। নলকূপগুলোর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৬২৫টি, সাঘাটায় ৮০২টি, ফুলছড়িতে ৭৫৩টি, পলাশবাড়ীতে ২৪৫টি, সাদুল্যাপুরে ১৫৬টি, গোবিন্দগঞ্জে ১৩১টি ও সুন্দরগঞ্জে ৩১৯টি। সূত্রটি জানায়, গত ১৩ আগস্ট থেকে বন্যা শুরু হয়। পানি নেমে যেতে থাকে ৩০ আগস্ট থেকে। দীর্ঘ ১৭ দিন পানিতে ডুবে থাকায় নলকূপগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এগুলোতে পানি উঠছে না। ফলে বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে নদীর পানি ব্যবহার করছে। অকেজো নলকূপ মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

সোমবার সকালে কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির আঙ্গিনায় বসানো নলকূপ অকেজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেগুলোতে পানি উঠছে না। ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের গৃহিণী আনজু আরা (৪০) বলেন, ‘আংনাত (আঙ্গিনা) এ্যকনা কল (নলকূপ) আচিল, তাক বানের পানিত ডুবি থাকি নসটো হচে। দূর থাকি পানি আনি খাবার নাগচি। কাউয়ো ভালো করব্যার আইসে নাই’।

একই গ্রামের কৃষক আমির আলী (৫৫) বললেন, ‘হামারঘরে পাড়াত একন্যা সোরকারি কল আচিল। সেটা বানোত নসটো হচে। গায়োত মেকার নাই। ভালো করতে ম্যালা ট্যাকা নাগে। ট্যাকা পামো কোনটে।’ উড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিয়নের অকেজো নলকূপ মেরামতের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে জানানো হয়েছে।’

একই উপজেলার এরন্ডোবাড়ি ইউনিয়নের ডাকাতিয়ারচর গ্রামের হাসনা বেগম (৪২) বলেন, ‘গায়ের সগ কল ডুবি গেচিলো। বেশিগুলে নসটো হচে, পানি উঠি না। এক মাইল দূর থাকি কলের পানি আনা নাগে। তাঈ হামরা নদির পানি গরোমকরি খাবার নাগচি’। একই গ্রামের দিনমজুর জলিল মিয়া (৫৫) বলেন, ‘বানোত বাড়ি-ঘর, ধান চাউল, কল সগি নসটো হচে। ভাঙা ঘরোত থাকপ্যার নাগচি। গায়োত কাম নাই। দুইব্যালা ভাত খাবার পাইনে। কল ভালো করমো ক্যামনকরি। এ্যাকদিন দূর থাকি পানি আনি, থাক থুয়া দুই তিনদিন খাবার নাগচি।’ সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামের কৃষক রানা মিয়া (৪৮) বলেন, ‘এ্যাকবেলা না খায়া থাকা যায়, কিনতো পানি ছাড়া চলে না। সেই কল বানোত নসটো হয়া আচে’। নলকূপ মেরামতে কি উদ্যোগ নিয়েছেন—জানতে চাইলে গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘বন্যার পর জেলার ৫১৩টি নষ্ট হওয়া নলকূপ মেরামত করা হয়েছে। অবশিষ্ট নলকূপ মেরামতে ২৪ জন মেকানিক কাজ করছেন।’

আপনার অভিমত