অতিরিক্ত ৭০ কোচ দিচ্ছে সৈয়দপুর যুক্ত হবে ঢাকা-পার্বতীপুর ও ঢাকা-খুলনা রুটে

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখী মানুষের পরিবহন নিশ্চিত করতে আমরা ৭০টি কোচ মেরামতে কাজ করে যাচ্ছি। এসব কোচ ঢাকা-পার্বতীপুর ও ঢাকা-খুলনা রুটে দুটি বিশেষ ট্রেনসহ অন্যান্য যাত্রীবাহী ট্রেনে জুড়ে দিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে।’

ঈদুল আযহা উপলক্ষে রেলে যাত্রী পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে অতিরিক্ত ৭০টি কোচ দেবে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। শেষ মুহূর্তে ওই কোচগুলো মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারখানার শ্রমিক-প্রকৌশলীরা।

সরেজমিনে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চোখে পড়ে। বসে নেই কোনো শ্রমিক-প্রকৌশলী। সমানতালে কাজ চলছে ২৮টি উপকারখানা জুড়ে (শপ)। সর্বত্র মেশিন আর যন্ত্রগুলো সব দেখা যায়। ফলে বিকট শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছিল গোটা কারখানা এলাকা।

ক্যারেজ শপে কাজ চলছিল জরাজীর্ণ কোচ মেরামতের। ওয়েলডিং করছিলেন একদল শ্রমিক। এইচআর শপে চলছিল ভারী মেরামত। আর বগিশপে চলছিল কোচের মূল অবকাঠামোর (সুপার স্ট্রাকচার) সাথে আন্ডারফ্রেম অর্থাত্ বগি জোড়া লাগানোর কাজ। পেইন্ট শপে দেওয়া হচ্ছিল তৈরি কোচগুলোতে রঙয়ের প্রলেপ।

ক্যারেজ শপের ইনচার্জ ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসএসএই) দিলশাদ করিম আবু হেনার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের পরপরই কোরবানির ঈদের জন্য গাড়ি (কোচ) মেরামতে ব্যস্ত রয়েছি আমরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ রয়েছে কোরবানি ঈদে ঘরমুখী মানুষের যে ঢল নামবে তা নিরসনে অনেক বেশি কোচ দিতে হবে। আমরা সেই নির্দেশনাকে সামনে রেখে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত কোচ মেরামতের কাজ হাতে নিয়েছি।’

পেইন্টশপে চলছিল কোচগুলো রঙ করার কাজ। সেখানে কথা হয় শপের ইনচার্জ আরিফুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ‘ঈদের জন্য কাজের গতি বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি শ্রম দিচ্ছেন শ্রমিকরা। তৈরি হয়ে আসা কোচগুলোতে আমরা রঙ করছি।’

সৈয়দপুর কারখানার সূত্র মতে, গত ঈদুল ফিতরে এখানে ৯৩টি কোচ মেরামত করা হয়েছে। শ্রমিক ও বাজেট স্বল্পতা সত্যেও কর্তৃপক্ষ ওই সময় ৮৫টি কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কিন্তু শ্রমিক-কর্মচারীরা অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে বেশি সংখ্যক কোচ রেলের ট্রাফিক বিভাগকে হস্তান্তর করে। সে অনুযায়ী কোরবানি ঈদে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৬৫টি কোচ মেরামতের। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চায় ৭০টি কোচ। ফলে সেই গতিতেই কাজ হচ্ছে।

সূত্রটি জানায়, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার লোকবল দিন দিন কমছে। দীর্ঘদিন নতুন নিয়োগ নেই। অথচ অবসরে যাচ্ছেন জ্যেষ্ঠ শ্রমিক-কর্মচারীরা। বর্তমানে তিন হাজার ৭১ জন শ্রমিকের স্থলে সৈয়দপুর কারখানায় কর্মরত আছেন মাত্র এক হাজার ১৬৯ জন। ফলে চাপ বেড়েছে কাজে। সংকট থাকলেও শ্রমিকরা উত্সাহ নিয়েই কাজ করছেন। কারণ ঈদে যাতে যাত্রীরা দুর্ভোগে না পড়ে।

রেলওয়ের সূত্রমতে, দৈনন্দিন কাজের বাইরে দিনে অতিরিক্ত এক ঘণ্টা ওভারটাইম (অতিরিক্ত কাজ) করে নির্মিত হচ্ছে ৭০টি কোচ। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪০টি কোচ হস্তান্তর করা হয়েছে রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগের কাছে। ২৮ আগস্টের মধ্যে বাদবাকি কোচগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কারখানার যাবতীয় উত্পাদন সচল রাখতে রেলওয়ের প্রধান কার্যালয়ের কাছে ৫৮ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে চলতি অর্থবছরে। গত বছরও সমপরিমাণ অর্থ চাওয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দ মেলে মাত্র ২২ কোটি ২০ লাখ টাকা। কাঙ্ক্ষিত বাজেট বরাদ্দ পেলে এবং লোকবল সংকট নিরসন হলে এ কারখানায় উত্পাদন বহুগুণ বাড়বে বলে জানায় রেলওয়ে সূত্র।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কার্য ব্যবস্থাপক (ডাব­ুএম) আমিনুল হাসান বলেন, ‘ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করাই আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। ওই চ্যালেঞ্জকেই সামনে রেখে আমরা অতিরিক্ত কাজ করছি। শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের সর্বোচ্চ শ্রম দিচ্ছেন।’

 

আপনার অভিমত