আর ৫-৭ দিন পর ধান কাটা যাবে। কদিন পরে এ ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। রংপুর অঞ্চলে আশ্বিন-কার্তিক অভাবের মাস। এ সময় অনেক কৃষকের ঘরে খাবার থাকে না। থাকে না শ্রমিকের মজুরি। হাজার হাজার শ্রমিক ও কর্মজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। আর্শ্বিন-কার্তিক মাস কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI) বিআর ৩৩, ব্রিধান ৫৭ নামের স্বল্প মেয়াদি জাত আবিষ্কার করেন। এর জীবত্কাল ১০৫ থেকে ১১০ দিন। যেখানে অন্যান্য জাতের জীবন কাল ১৪০-১৫০ দিন।

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মাঠে মাঠে আগাম আমনে ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে। তাই বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার আশায় কৃষকের মুখে ফুটেছে সোনালি হাসি।

এ ছাড়া কৃষকরা আমন মৌসুমেও হাইব্রিড ধানের চাষ করছে। অনেকে  এই ধানকে বলে মঙ্গার ধান। রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা এখন অনেক সচেতন। আগাম আমন, আগাম আলু এবং আগাম বোরো কিংবা ভুট্টা, ডাল এই শস্য বিন্যাসকে কাজে লাগিয়ে কৃষকরা এখন অনেক অগ্রগামী।

কৃষকরা জানান, আগাম ধান ওঠার পর সেখানে আগাম আলু করলে খরচ কম হবে। ৫-৭ বছর আগেও কৃষকরা দীর্ঘ মেয়াদি জাতের উপর নির্ভরশীল থাকত। আর্শ্বিন-কার্তিক মাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউট, আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এ কারণেই কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বেড়ে গেছে। কৃষকরাও সুফল পেয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেতের মধ্যখানে দোল খাচ্ছে মাথা হেলান আমন ধানের শিস। কোনো কোনো ধানে লেগেছে রং। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে কৃষকের বুকে যেন অপার আনন্দ। আর ক’দিন পরে ঘরে ওঠবে সোনালি ধান। কি আনন্দ কৃষকের। উপজেলার চর শংকরদহ, পূর্ব ইচলি, পশ্চিম ইচলি , হাবু, বালারঘাট, কিসামত হাবু, চেংমারী, মান্দ্রাইন, কুঠিরপাড়, জয়দেব, বেতগাড়ী, মঠেরপাড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। কেউ বা লাগিয়েছে বিআর-৩৩, কেউ বা বিনা-৭, কেউবা লাগিয়েছে হাইব্রিড জাতের ধান। কিসামত হাবু গ্রামের কৃষক ময়নাল ৬০ শতক জমিতে ব্রি-ধান ৪৫, হাবু গ্রামের নুরল আমিন ২৫ শতক জমিতে বালিয়া ২ জাতের হাইব্রিড ধান লাগিয়েছেন। ধান পাক ধরেছে। তাছাড়া অনেকে ব্রিধান ৬২ লাগিয়েছেন। কোলকোন্দ ইউনিয়নের মঠের পাড় এলাকার কৃষক মতিয়ার ৩০ শতক  ব্রিধান ৩৩, আব্দুল খালেক ৩৩ জমিতে বিনা-৭ লাগিয়েছেন।  কৃষক নুরুল আমিন বলেন, ‘আগাম ধানে সমস্যা থাকলেও ধানের ভালো দাম পাওয়া যাবে।’ কৃষকরা জানান, ধান কাটার পর ওই জমিতে তারা আগাম আলু লাগাবেন। এতে লাভ ভালো হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৯ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের ধান লাগানো হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কৃষকদের মাঝে আগাম ফসল উত্পাদনে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা এখন অল্প খরচে বেশি লাভ করতে চায়। এ ছাড়া আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফসল উঠলে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। কৃষকরা আগাম ধান করার পর আগাম আলু, সরিষা কিংবা ডাল জাতীয় শস্য আবাদ করতে পারবে। কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। সেই সাথে খড়েরও ভালো দাম পাবে।’

 

আপনার অভিমত